Archive for 2016-03-06
এক ক্লিকেই ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠান ফেসবুকের সব বন্ধুদের।
By : RABBYআশা করি সবাই ভালো আছেন।অনেক দিন পর টিটিতে টিউন করলাম।বর্তমানে সময়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম হচ্ছে ফেসবুক।এই নিয়ে বিস্তারিত বলার কোন প্রয়োজন নেই।আমার থেকে এর সম্বন্ধে
আপনারাই বেশি জানেন। ফেসবুকে আমরা আমাদের জনপ্রিয়তা,টিউনে বেশি লাইক,টিউন বেশি শেয়ার এর জন্য ফেন্ড লিষ্টে বন্ধু বাড়ানোর জন্য ওঠে পরে লাগি।আমার মত এই রকম যাদের স্বভাব তাদের কাজকে আর একটু সহজ করে দিতে আমার এই টিউন।যারা একটা একটা করে sent friend request botton চাপতে বিরক্ত হয়ে গেছেন তাদেরকে আজকে আমি এমন একটা ট্রিক্স শিখাব যার মাধ্যমে ২০০-২৫০ ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট সেন্ড করতে পারবেন এক ক্লিকেই।চলুন এবার ট্রিক্সটা দেখে নেই।
১। প্রথমে ফায়ারফক্স অথবা গুগল ক্রোমে ফেসবুক লগইন করুন।
২। এবার এড ফেন্ড এ যান এবং see all ক্লিক করেন।তারপর সাইড বার নিচের দিকে স্ক্রল করতে থাকেন।পুরো পেইজে যতজন লোক থাকবে ততটা রিকুয়েস্ট সেন্ড হবে।
৩। স্ক্রল করা শেষ হলে মাউস এর রাইট বাটন ক্লিক করে Inspact Element এ যান।এরপর Console ক্লিক করুন।
৫। এবার Console এ ক্লিক করার পর একটা খালি বক্স আসবে।ওইটা তে নিচ থেকে ডাউনলোড করা স্ক্রিপটা Paste করে Enter চাপলেই দেখবেন সব ফেন্ড রিকয়েস্ট সেন্ড হয়ে গেছে।
স্ক্রিপ্ট ডাউনলোড করুন।
টিউনটি পরে যদি বুজতে না পারেন তাহলে আমার করা ভিডিও টিউটরিয়াল দেখেতে পারেন।
<iframe width="560" height="315" src="https://www.youtube.com/embed/gkYzqIJPsHI" frameborder="0" allowfullscreen></iframe>
ভিডিও টিউটরিয়াল লিঙ্কঃ https://youtu.be/gkYzqIJPsHI
VPS কি এবং কেন দরকার
By : RABBY
ভিপিএস (VPS) হল,ভার্চুয়াল প্রাইভেট সার্ভার (virtual private server)। একটা ডেডিকেটেট সার্ভারকে ভার্চুয়ালাইজেশন সফটওয়্যারের মাধ্যমে একাধিক ভাগে ভাগ করে নোড (slice/node) তৈরী করা হয়। এই একেকটা নোড একেকটা ইন্ডিপেন্ডেট সার্ভারের মত কাজ করে। আর একেই ভিপিএস বা ভার্চুয়াল প্রাইভেট সার্ভার বলা হয়।ভিপিএস ডেডিকেটেট সার্ভারের মতই অপারেটিং সিস্টেমে রান হয়ে থাকে, এবং ডেডিকেটেট সার্ভারের ন্যায় ইউজার কন্টোল থাকে, এবং ক্লায়নেট নিজের স্বাধীন মত সফটওয়্যার ইউজ করতে পারে। ভিপিএস সার্ভার ডেডিকেটেড সার্ভারের থেকে প্রাইজ কম হয়ে থাকে। এবং ভিপিএসে যেহেতু একটি ফিজিক্যাল হার্ডওয়ার ভাগ করে ইউজ হয়ে থাকে সেহেতু ভিপিএস এর তুলনায় ডেডিকেটেড সার্ভারের পারফর্মেন্স ভাল হবে। মুলত অধিক রিসোর্স এর অন্য ডেডিকেটেড সার্ভার ইউজ করা হয় এবং অপেক্ষাকৃত কম রিসোর্স এর জন্য ভিপিএস সার্ভার ইউজ কয়া হয়।
যদি কেও Email Marketing করতে চান তাহলে VPS অনেক দরকারি
ফরেক্স ট্রেডাররা VPS এর নাম প্রায় সবাই শুনেছেন। মুলত যারা ওয়েব হোস্টিং করে থাকেন তারা অবশ্যই VPS ব্যবহার করে থাকেন। অবশ্য তাদের VPS গুলা হয় লিনাক্স বেজড। যারা ফরেক্স ট্রেড করে থাকেন তাদেরগুলা হবে Windows Server বেজড। কারণ আমরা Mt4 ব্যবহার করি এবং এর সবোর্ত্তম সুবিধা পাই কিন্তু Windows এ। যারা EA (ফরেক্স রোবট) ব্যবহার করে ট্রেড করেন, অথবা অতি মেধাবী কিছু কোডার যারা ব্রোকারের প্রাইছ ফিডের দুর্বলতা বের করে Arbitrage trading করেন স্পেশাল কিছু EA ব্যবহার করেন তারা অবশ্যই ফরেক্স VPS ব্যবহার করেন।
ফরেক্স VPS মুলত একটি ভার্চুয়াল কম্পিউটার যা হাইস্পীডি এবং সবসময় দ্রুতগতি সম্পন্ন ইন্টারনেট সম্পন্ন হবে। যা কখনো হ্যাং করেনা, বন্ধ হয়না, এবং কখনো নেটওয়ার্ক চলে যায়না। আমরা যারা ফরেক্স এ রোবট ব্যবহার করে থাকি তাদের সবসময় পিসি চালু রাখতে হয়। কখনো যদি পিসি বন্ধ বা হ্যাং হয়ে যায় তখন কিন্তু রোবট আর কাজ করেনা।
সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো VPS সার্ভারে এক্সিকিউশন আমাদের স্লো গতির ইন্টারনেট থেকে অনেক দ্রুত হয়ে থাকে। যার ফলে স্লিপেজ বা রিকোট সমস্যা হয়না বললেই চলে। আর যারা সবসময় ল্যাপটপ বা পিসির সামনে থাকতে পারেননা তারা চাইলেই কিন্তু মোবাইল থেকে সরাসরি VPS সার্ভারে লগইন করে মোবাইলেই Mt4 এর ক্লাসিক ইন্টারফেস যা পিসিতে থাকে সেটা দেখতে পারেন। এবং মোবাইল থেকেই সার্ভার নিয়ন্ত্রন করতে পারেন। সেটার জন্য google playstore এ অনেক এপস আছে।
আমি Remote RDP ব্যবহার করি VPS সার্ভার নিয়ন্ত্রনের জন্য।
মোটকথা যারা সিরিয়াস ট্রেডার এবং পার্সোনালি EA বা অটো স্ক্রীপ্ট ব্যবহার করে থাকেন তাদের জন্য কিন্তু FOREX VPS এর বিকল্প নেই।
VPS হোস্টিং এর কিছু সুবিধা নিচে দিলামঃ
1. Servers are Lighthttpd powered, your WordPress sites and Joomla sites with Ajax will run 10 times faster than Apache servers.
2. All business class hosting supported. Like PTC/E-Commerce Etc.
3. All hosting features, plugins are installed.
4. 100% Uptime (SLA) you will get.
5. 10 different language supported. Including Chinese as well..! Not open-source which only have 3 language.
6. Unlimited hosting facilities.
7. SSL installation facilities with dedicated IP.
8. You can also use that as your backup server.
VPS হোলো Virtual Private Server. অল্প টাকায় নিজের একটা server. আপনার যদি অনেক user/traffic থাকে কিংবা নিরাপত্তা সমস্যা থাকে তবে VPS হতে পারে ভালো সমাধান। যে হারে hacking চলছে তাতে VPS ই ভালো সমাধান। নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকবে সব কিছু।
কোথা থেকে VPS/Shared Hosting কিনবেন?
নিজের হাত দিয়া কিনবেন। নিজে নিজে দেখে কিনবেন। টাকা পরিশোধ করবেন MasterCard/Friend/আমাদের মাধ্যম দিয়া। আপনার পরিচিত freelancer থাকলে তার কার্ড দিয়া কিনতে পারেন। বাহিরে ফ্রেন্ড থাকলে তার সাহায্য নিতে পারেন। কোনো উপায় না থাকলে আমাদের সাহায্য নিতে পারেন।
আমি বাংলাদেশ এর একটি VPS Provider এর নাম বলবো খুব ভাল সার্ভিস দেয় Fog Hosting (এরা Email Marketing এর জন্য VPS দেয় with 16 ips)
অথবা আপনি চাইলে বাহিরের সার্ভিস ও নিতে পারবেন যেমন Hostgator , Godaddy (এরা email marketing এর জন্য VPS দেয় না :()
যদি কেও Email Marketing করতে চান তাহলে VPS অনেক দরকারি
ফরেক্স ট্রেডাররা VPS এর নাম প্রায় সবাই শুনেছেন। মুলত যারা ওয়েব হোস্টিং করে থাকেন তারা অবশ্যই VPS ব্যবহার করে থাকেন। অবশ্য তাদের VPS গুলা হয় লিনাক্স বেজড। যারা ফরেক্স ট্রেড করে থাকেন তাদেরগুলা হবে Windows Server বেজড। কারণ আমরা Mt4 ব্যবহার করি এবং এর সবোর্ত্তম সুবিধা পাই কিন্তু Windows এ। যারা EA (ফরেক্স রোবট) ব্যবহার করে ট্রেড করেন, অথবা অতি মেধাবী কিছু কোডার যারা ব্রোকারের প্রাইছ ফিডের দুর্বলতা বের করে Arbitrage trading করেন স্পেশাল কিছু EA ব্যবহার করেন তারা অবশ্যই ফরেক্স VPS ব্যবহার করেন।
ফরেক্স VPS মুলত একটি ভার্চুয়াল কম্পিউটার যা হাইস্পীডি এবং সবসময় দ্রুতগতি সম্পন্ন ইন্টারনেট সম্পন্ন হবে। যা কখনো হ্যাং করেনা, বন্ধ হয়না, এবং কখনো নেটওয়ার্ক চলে যায়না। আমরা যারা ফরেক্স এ রোবট ব্যবহার করে থাকি তাদের সবসময় পিসি চালু রাখতে হয়। কখনো যদি পিসি বন্ধ বা হ্যাং হয়ে যায় তখন কিন্তু রোবট আর কাজ করেনা।
সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো VPS সার্ভারে এক্সিকিউশন আমাদের স্লো গতির ইন্টারনেট থেকে অনেক দ্রুত হয়ে থাকে। যার ফলে স্লিপেজ বা রিকোট সমস্যা হয়না বললেই চলে। আর যারা সবসময় ল্যাপটপ বা পিসির সামনে থাকতে পারেননা তারা চাইলেই কিন্তু মোবাইল থেকে সরাসরি VPS সার্ভারে লগইন করে মোবাইলেই Mt4 এর ক্লাসিক ইন্টারফেস যা পিসিতে থাকে সেটা দেখতে পারেন। এবং মোবাইল থেকেই সার্ভার নিয়ন্ত্রন করতে পারেন। সেটার জন্য google playstore এ অনেক এপস আছে।
আমি Remote RDP ব্যবহার করি VPS সার্ভার নিয়ন্ত্রনের জন্য।
মোটকথা যারা সিরিয়াস ট্রেডার এবং পার্সোনালি EA বা অটো স্ক্রীপ্ট ব্যবহার করে থাকেন তাদের জন্য কিন্তু FOREX VPS এর বিকল্প নেই।
VPS হোস্টিং এর কিছু সুবিধা নিচে দিলামঃ
1. Servers are Lighthttpd powered, your WordPress sites and Joomla sites with Ajax will run 10 times faster than Apache servers.
2. All business class hosting supported. Like PTC/E-Commerce Etc.
3. All hosting features, plugins are installed.
4. 100% Uptime (SLA) you will get.
5. 10 different language supported. Including Chinese as well..! Not open-source which only have 3 language.
6. Unlimited hosting facilities.
7. SSL installation facilities with dedicated IP.
8. You can also use that as your backup server.
VPS হোলো Virtual Private Server. অল্প টাকায় নিজের একটা server. আপনার যদি অনেক user/traffic থাকে কিংবা নিরাপত্তা সমস্যা থাকে তবে VPS হতে পারে ভালো সমাধান। যে হারে hacking চলছে তাতে VPS ই ভালো সমাধান। নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকবে সব কিছু।
কোথা থেকে VPS/Shared Hosting কিনবেন?
নিজের হাত দিয়া কিনবেন। নিজে নিজে দেখে কিনবেন। টাকা পরিশোধ করবেন MasterCard/Friend/আমাদের মাধ্যম দিয়া। আপনার পরিচিত freelancer থাকলে তার কার্ড দিয়া কিনতে পারেন। বাহিরে ফ্রেন্ড থাকলে তার সাহায্য নিতে পারেন। কোনো উপায় না থাকলে আমাদের সাহায্য নিতে পারেন।
আমি বাংলাদেশ এর একটি VPS Provider এর নাম বলবো খুব ভাল সার্ভিস দেয় Fog Hosting (এরা Email Marketing এর জন্য VPS দেয় with 16 ips)
অথবা আপনি চাইলে বাহিরের সার্ভিস ও নিতে পারবেন যেমন Hostgator , Godaddy (এরা email marketing এর জন্য VPS দেয় না :()
প্রিয় বিজ্ঞানী গ্যালিলিও ও তার জীবনী এবং আবিষ্কার।
By : RABBY
গ্যালিলিও একজন বিখ্যাত ইতালিয়ান বিজ্ঞানী যিনি বিশেষত স্বর্নের খাদ ও পৃথিবী সুর্যের চারপাশে ঘুরছে এই তত্বের জন্য বিখ্যাত। তিনি ১৫৬৪ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি তারিখে ইতালির টুসকানিতে অবস্থিত পিসা নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ভিনসেঞ্জো গ্যালিলি গণিতজ্ঞ এবং সংগীতশিল্পী ছিলেন। ভিনসেঞ্জো ১৫২০ সালে ইতালির ফ্লোরেনসে জন্ম নেন। তার মা’র নাম গিউলিয়া আমানাটি (Giulia Ammannati)। গ্যালিলিও ছিলেন বাবা মা’র সাত সন্তানের (কারও কারও মতে ৬) মধ্যে সবার বড়। অধিকাংশ বিশেষজ্ঞের মতে তিনি ভাইবোনদের মধ্যে সবচেয়ে মেধাবীও ছিলেন।
বেশ অল্প বয়স থেকে গ্যালিলিওর শিক্ষাজীবন শুরু হয়। সাধারণ শিক্ষার পর তিনি পিসা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন, কিন্তু আর্থিক অসচ্ছলতার দরুণ সেখানেই তার পড়াশোনা বন্ধ করে দিতে হয়। তার পরেও ১৫৮৯ সালে গ্যালিলিও পিসা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার জন্য একটি পদ পান এবং সেখানে গণিত পড়ানো শুরু করেন। এর পরপরই তিনি পাদুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যান এবং সেখানকার অনুষদে জ্যামিতি, বলবিজ্ঞান এবং জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ে ১৬১০ সালের পূর্ব পর্যন্ত অধ্যাপনা করেন। এই সময়ের মধ্যেই তিনি বিজ্ঞানের মৌলিক বিষয়গুলো নিয়ে ভাবেন এবং বহু গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার করেন।
একজন ইতালীয় পদার্থবিজ্ঞানী, জ্যোতির্বিজ্ঞানী, গণিতজ্ঞ এবং দার্শনিক যিনি বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের সাথে বেশ নিগূঢ়ভাবে সম্পৃক্ত। তাঁর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অবদানের মধ্যে রয়েছে দূরবীক্ষণ যন্ত্রের উন্নতি সাধন যা জ্যোতির্বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে, বিভিন্ন ধরণের অনেক জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ, নিউটনের গতির প্রথম এবং দ্বিতীয় সূত্র, এবং কোপারনিকাসের মতবাদের পক্ষে একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ। বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংয়ের মতে আধুনিক যুগে প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের এতো বিশাল অগ্রগতির পেছনে গ্যালিলিওর চেয়ে বেশি অবদান আর কেউ রাখতে পারেনি। তাকে আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের জনক,আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের জনক এবং এমনকি আধুনিক বিজ্ঞানের জনক হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। এরিস্টটলীয় ধারণার অবসানে গ্যালিলিওর আবিষ্কারগুলোই সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে।
বিজ্ঞানে গ্যালিলিওর অবদানঃ
অস্বীকার করার উপায় নেই যে গ্যালিলিওর হাতেই আধুনিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির সুচনা ঘটে। তিনিই প্রথম পর্যবেক্ষন ও পরিক্ষালব্ধ ভাবে দেখান, যে কোন কিছু কেন হয় ? কিভাবে হয় ?।
গানিতিক তত্বের নির্মান ও তা থেকে বৈজ্ঞানিক ধারার সুচনা প্রথম স্থাপন করেন গ্যালিলিও। আসুন তার কিছু উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার সম্পর্কে জানিঃ-
দূরবীক্ষণ যন্ত্রের আবিস্কারঃ
১৬০৯ সালে গ্যালিলিও স্বাধীনভাবে এবং উন্নত ধরনের দূরবীক্ষণ যন্ত্র নির্মাণ ও এই যন্ত্রকে জ্যোতির্বিদ্যায় সার্থকভাবে প্রয়োগের করেন। এর আগে ১৬০৮ খ্রীষ্টাব্দে ওলন্দাজ চশমা নির্মাতা লিপেরশাইম তার নির্মিত এক দূরবীক্ষণ যন্ত্রের কথা প্রকাশ করেন এবং সেই বছরেই এই অদ্ভুত কাচ নির্মিত যন্ত্রের কথা গ্যালিলিওর নিকট পৌঁছে। এসময় তিনি তার এক রচনায় লিখেন: “প্রায় ১০ মাস পূর্বে আমার কাছে সংবাদ পৌঁছে যে জনৈক ওলন্দাজ চশমা নির্মাতা এমন এক যন্ত্র আবিষ্কার করেছেন যার দ্বারা দূরবর্তী বস্তুদের নিকটবর্তী বস্তুর মতো স্পষ্ট দেখা যায়। এ খবর পাওয়া মাত্র আমি নিজে কিভাবে এরূপ একটি যন্ত্র নির্মাণ করতে পারি তা চিন্তা করতে লাগলাম।” শীঘ্রই দূরবীক্ষণ যন্ত্রের নানা উন্নতি সাধন করে গ্যালিলিও দূরবর্তী বস্তুদের অন্তত ৩০ গুণ বড় করে দেখার ব্যবস্থা করেন।
চাঁদের কলঙ্কের কারণ আবিস্কারঃ
দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে জ্যোতিষ্কদের প্রথম পর্যবেক্ষণের ফল ‘সাইডরিয়াস নানসিয়াস’ বা ‘নক্ষত্র থেকে সংবাদবাহক’ গ্রন্থে লিপিবব্ধ হয় (প্রকাশকাল ১৬১০ খ্রীষ্টাব্দ)।
চাঁদের পৃষ্ঠের খাদ, ছোট-বড় অনেক দাগ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে এই গ্রন্থে আলোচিত হয়। ভূপৃষ্ঠের ন্যায় চাঁদের উপরিভাগে যে পাহাড়, পর্বত, উপত্যকা, নদী, গহ্বর, জলাশয় প্রভৃতির দ্বারা গঠিত গ্যালিলিও এইরূপ অভিমত ব্যক্ত করেন। দূরবীক্ষণ যন্ত্রে বড় বড় কাল
দাগ দেখে তিনি তাদের সমুদ্র মনে করেছিলেন, পরে অবশ্য এই ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়।
ছায়াপথ, বিষমতারা, নক্ষত্রপুঞ্জ, নীহারিকাঃ
খালি চোখে অদৃশ্য অসংখ্য নক্ষত্রের অস্তিত্ব দূরবীক্ষণ যন্ত্রে ধরা পড়ে। সে সময় খালি চোখে কৃত্তিকা তারামণ্ডলে মাত্র ৬টি নক্ষত্র দেখা যেত; কিন্তু গ্যালিলিও দূরবীক্ষণ যন্ত্রের দ্বারা ৩৬টি নক্ষত্র পর্যবেক্ষণ করেন। সে সময়ের রহস্যময় ছায়াপথ মিল্কিওয়ে পর্যবেক্ষণ করে দেখান যে, তা আসলে অসংখ্য নক্ষত্রের সমষ্টি। দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে তিনি বিষমতারা, নক্ষত্রপুঞ্জ এবং কয়েকটি নীহারিকাও আবিষ্কার করেছিলেন।
বৃহষ্পতি গ্রহের উপগ্রহ আবিষ্কারঃ
দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে গ্যালিলিও প্রথম পর্যায়ের আবিষ্কারগুলোর মধ্যে বৃহস্পতি গ্রহের উপগ্রহ আবিষ্কার বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। তিনি পরপর কয়েক রাত বৃহস্পতি গ্রহ পর্যবেক্ষণ করে বৃহস্পতির চারটি উপগ্রহ খুঁজে পান। বৃহস্পতির উপগ্রহের আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয় যে, ‘গ্রহ-নক্ষত্র প্রভৃতি জ্যোতিষ্করা একমাত্র পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকে’, প্রাচীন জ্যোতির্বিদদের এই মতবাদ সত্য নয়।
শনির বলয়ঃ
১৬১০ খ্রীষ্টাব্দের শেষভাগে পাদুয়া পরিত্যাগের কিছু পূর্বে গ্যালিলিও শনির বলয় আবিষ্কার করেন।
সৌর কলঙ্কঃ
১৬১০ খ্রীষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর বা অক্টোবর মাসে গ্যালিলিও সর্বপ্রথম সূর্যে কতগুলো কালো দাগ পর্যবেক্ষণ করেন। কিন্তু ১৬১২ খ্রীষ্টাব্দের মে মাসের পূর্বে তিনি এ আবিষ্কারের কথা প্রকাশ করেন নি। ইতিমধ্যে ইংল্যাণ্ডের বিজ্ঞানী টমাস হ্যারিয়ট, হল্যাণ্ডের জন ফ্যাব্রিসিয়াস ও জার্মানীতে শাইনার স্বাধীনভাবে সৌরকলঙ্ক পর্যবেক্ষণ করেন, এবং তাদের আবিষ্কারের কথা গ্যালিলিওর আগেই প্রকাশিত হয়। সেই জন্য সৌরকলঙ্ক আবিষ্কারের কৃতিত্ব হ্যারিয়ট, ফ্যাব্রিসিয়াস, শাইনার ও গ্যালিলিও প্রত্যেকেরই আংশিকভাবে প্রাপ্য।
মৃত্যু ও শেষ জীবনঃ
গ্যালিলিও এবং মারিনা গ্যামবা তিন সন্তানের জন্ম দেন, কিন্তু তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হননি। গ্যালিলিও একজন নিবেদিত রোমান ক্যাথলিক ছিলেন বলে যে ধারণা প্রচলিত আছে তা মেনে নিলে তার বিবাহবহির্ভূত এই যৌনাচার অনেকটাই অবাস্তব মনে হয়। তাদের দুই মেয়ে (ভার্জিনিয়া ও লিভিয়া) এবং এক ছেলে (ভিনসেঞ্জিও) জন্মেছিলো। বিবাহবহির্ভূত সন্তান উৎপাদনের জন্য তাদের দুই মেয়েকেই স্বল্প বয়সে আরসেট্রিতে অবস্থিত সান মেটিও নামক চার্চে পাঠিয়ে দেয়া হয়। তাদের দুই মেয়েকে বাকি জীবন সেখানেই পার করতে হয়েছিলো। কনভেন্টে প্রবেশের পর ভার্জিনিয় মারিয়া সেলেস্টি নাম ধারণ করে, সে-ই ছিলো গ্যালিলিওর সন্তানদের মধ্যে সবার বড়। ভার্জিনিয়া সবচেয়ে আদরের সন্তানও ছিলো এবং বাবার মেধার খানিকটা উত্তরাধিকার সে-ই লাভ করতে সমর্থ হয়েছিলো। ১৬৩৪ সালের ২ এপ্রিল তারিখে সে মারা যায়। তার কবর বাসিলিকা ডি সান্তা ক্রস ডি ফিরেঞ্জে গ্যালিলিওর কবরের পাশেই অবস্থিত। লিভিয়া (জ. ১৬০১) সুওর আরকাঞ্জেলা নাম ধারণ করে। বড় বোনের মত সে কিছু করে দেখাতে পারেনি, জীবনের বেশির ভাগ সময়ই সে অসুস্ত ছিলো। ছেলে ভিনসেঞ্জিও (জ. ১৬০৬) পরবর্তীতে বৈধ জাত্যাধিকারী হয় এবং সেসটিলা বচ্চিনারিককে (Sestilia Bocchineri) বিয়ে করে।
গ্যালিলিও মুর্তি
ফ্লোরেন্সের উফিজির বাইরে অবস্থিত মূর্তি
১৬১২ সালে গ্যালিলিও রোমে যেয়ে Accademia dei Lincei-তে যোগ দেন। সেখানে তিনি মূলত সৌর কলঙ্ক পযর্বেক্ষন করতেন। ঐ সালেই কোপারনিকাসের মতবাদের বিরোধী মতবাদ প্রচারিত হয় এবং গ্যালিলিও তা সমর্থন করেন। ১৬১৪ সালে সান্তা মারিয়া নভেলার প্রচারবেদিতে দাড়িয়ে ফাদার টমাসো কাচ্চিনি (Tommaso Caccini, ১৫৭৪ – ১৬৪৮) ব্যাখ্যা সহকারে পৃথিবীর গতি সম্পর্কে গ্যালিলিওর মতবাদ বর্ণনা করেন। এরপর সেই মতবাদের ভিত্তিতে তার বিচার করেন এবং ঘোষণা করেন যে, এগুলো ভয়ঙ্কর এবং ধর্মদ্রোহীতার শামিল। এধরণের অভিযোগ থেকে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের চেষ্টায় তিনি রোমে যান। কিন্তু ১৬১৬ সালে কার্ডিনাল রবার্ট বেলারমাইন ব্যক্তিগতভাবে তার মামলাটি হাতে নেন এবং তাকে হেনস্ত করতে শুরু করেন। ধর্মীয় আইনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিধায় কোপারনিকাসের তত্ত্বকে স্বীকৃতি দেয়া হয় এবং ধর্মীয় আইন হিসেবে কোপারনিকান জ্যোতির্বিজ্ঞান পড়তে বা পড়াতে বাধ্য করা হয়। ১৬২২ সালে গ্যালিলিও তার বিখ্যাত বই দ্য অ্যাসাইয়ার (Saggiatore) রচনা করেন যা ১৬২৩ সালে স্বীকৃতি পাওয়ার পর প্রকাশিত হয়। ১৬২৪ সালে পৃথিবীর প্রথম অণুবীক্ষণ যন্ত্র তৈরি করেন। ১৬৩০ সালে তিনি রোমে ফিরে যান তার রচিত একটি বই প্রকাশের লাইসেন্স নেয়ার জন্য। বইটির নাম ছিল, ডায়ালগ কনসারনিং দ্য টু চিফ ওয়ার্ল্ড সিস্টেম্স। এটি এই লাইসেন্সের আওতায়ই ১৬৩২ সালে ফ্লোরেন্স থেকে প্রকাশিত হয়। ঐ বছরেরই অক্টোবর মাসে তাকে রোমের পবিত্র দপ্তরের (Holy Office) সম্মুখীন হতে হয়। কারণ ছিল “Congregation for the Doctrine of the Faith” (বিশ্বাসের উপদেশাবলীর জন্য সমাবেশ)। আদালত থেকে তাকে একটি দন্ডাদেশ দেওয়া হয় যার মাধ্যমে তাকে পূর্ববর্তী ধ্যান-ধারণা শপথের মাধ্যমে পরিত্যাগের জন্য বলা হয়। এই দন্ডাদেশের কার্যকারিতা প্রমাণের জন্যই তাকে সিয়েনায় একঘরে জীবন কাটাতে হয়। এর কিছু পর ১৬৩৩ সালের ডিসেম্বরে তাকে তার নিজ বাড়ি আরসেট্রিতে ফিরে যাবার অনুমতি দেয়া হয়। ১৬৩৪ সালে তার বড় মেয়ের মৃত্যুর পর গ্যালিলিও অনেকটাই ভেঙে পড়েন। বড় মেয়ে সিস্টার সেলেস্টি (১৬০০ – ১৬৩৪) তাকে সবসময় সঙ্গ দিতো, এই অকালমৃত্যুতে তাই গ্যালিলিও হয়ে পড়েন নিঃসঙ্গ। ১৬৩৮ সালে গ্যালিলিও লিডেন থেকে তার সর্বশেষ বই টু নিউ সায়েন্সেস প্রকাশ করেন। আরসেট্রিতে ১৬৪২ সালের ৮ই জানুয়ারি তারিখে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর সময় তার ছাত্র ভিনসেঞ্জো ভিভিয়ানি তার পাশে ছিলেন।
বেশ অল্প বয়স থেকে গ্যালিলিওর শিক্ষাজীবন শুরু হয়। সাধারণ শিক্ষার পর তিনি পিসা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন, কিন্তু আর্থিক অসচ্ছলতার দরুণ সেখানেই তার পড়াশোনা বন্ধ করে দিতে হয়। তার পরেও ১৫৮৯ সালে গ্যালিলিও পিসা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার জন্য একটি পদ পান এবং সেখানে গণিত পড়ানো শুরু করেন। এর পরপরই তিনি পাদুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যান এবং সেখানকার অনুষদে জ্যামিতি, বলবিজ্ঞান এবং জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ে ১৬১০ সালের পূর্ব পর্যন্ত অধ্যাপনা করেন। এই সময়ের মধ্যেই তিনি বিজ্ঞানের মৌলিক বিষয়গুলো নিয়ে ভাবেন এবং বহু গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার করেন।
একজন ইতালীয় পদার্থবিজ্ঞানী, জ্যোতির্বিজ্ঞানী, গণিতজ্ঞ এবং দার্শনিক যিনি বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের সাথে বেশ নিগূঢ়ভাবে সম্পৃক্ত। তাঁর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অবদানের মধ্যে রয়েছে দূরবীক্ষণ যন্ত্রের উন্নতি সাধন যা জ্যোতির্বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে, বিভিন্ন ধরণের অনেক জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ, নিউটনের গতির প্রথম এবং দ্বিতীয় সূত্র, এবং কোপারনিকাসের মতবাদের পক্ষে একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ। বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংয়ের মতে আধুনিক যুগে প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের এতো বিশাল অগ্রগতির পেছনে গ্যালিলিওর চেয়ে বেশি অবদান আর কেউ রাখতে পারেনি। তাকে আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের জনক,আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের জনক এবং এমনকি আধুনিক বিজ্ঞানের জনক হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। এরিস্টটলীয় ধারণার অবসানে গ্যালিলিওর আবিষ্কারগুলোই সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে।
বিজ্ঞানে গ্যালিলিওর অবদানঃ
অস্বীকার করার উপায় নেই যে গ্যালিলিওর হাতেই আধুনিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির সুচনা ঘটে। তিনিই প্রথম পর্যবেক্ষন ও পরিক্ষালব্ধ ভাবে দেখান, যে কোন কিছু কেন হয় ? কিভাবে হয় ?।
গানিতিক তত্বের নির্মান ও তা থেকে বৈজ্ঞানিক ধারার সুচনা প্রথম স্থাপন করেন গ্যালিলিও। আসুন তার কিছু উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার সম্পর্কে জানিঃ-
দূরবীক্ষণ যন্ত্রের আবিস্কারঃ
১৬০৯ সালে গ্যালিলিও স্বাধীনভাবে এবং উন্নত ধরনের দূরবীক্ষণ যন্ত্র নির্মাণ ও এই যন্ত্রকে জ্যোতির্বিদ্যায় সার্থকভাবে প্রয়োগের করেন। এর আগে ১৬০৮ খ্রীষ্টাব্দে ওলন্দাজ চশমা নির্মাতা লিপেরশাইম তার নির্মিত এক দূরবীক্ষণ যন্ত্রের কথা প্রকাশ করেন এবং সেই বছরেই এই অদ্ভুত কাচ নির্মিত যন্ত্রের কথা গ্যালিলিওর নিকট পৌঁছে। এসময় তিনি তার এক রচনায় লিখেন: “প্রায় ১০ মাস পূর্বে আমার কাছে সংবাদ পৌঁছে যে জনৈক ওলন্দাজ চশমা নির্মাতা এমন এক যন্ত্র আবিষ্কার করেছেন যার দ্বারা দূরবর্তী বস্তুদের নিকটবর্তী বস্তুর মতো স্পষ্ট দেখা যায়। এ খবর পাওয়া মাত্র আমি নিজে কিভাবে এরূপ একটি যন্ত্র নির্মাণ করতে পারি তা চিন্তা করতে লাগলাম।” শীঘ্রই দূরবীক্ষণ যন্ত্রের নানা উন্নতি সাধন করে গ্যালিলিও দূরবর্তী বস্তুদের অন্তত ৩০ গুণ বড় করে দেখার ব্যবস্থা করেন।
চাঁদের কলঙ্কের কারণ আবিস্কারঃ
দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে জ্যোতিষ্কদের প্রথম পর্যবেক্ষণের ফল ‘সাইডরিয়াস নানসিয়াস’ বা ‘নক্ষত্র থেকে সংবাদবাহক’ গ্রন্থে লিপিবব্ধ হয় (প্রকাশকাল ১৬১০ খ্রীষ্টাব্দ)।
চাঁদের পৃষ্ঠের খাদ, ছোট-বড় অনেক দাগ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে এই গ্রন্থে আলোচিত হয়। ভূপৃষ্ঠের ন্যায় চাঁদের উপরিভাগে যে পাহাড়, পর্বত, উপত্যকা, নদী, গহ্বর, জলাশয় প্রভৃতির দ্বারা গঠিত গ্যালিলিও এইরূপ অভিমত ব্যক্ত করেন। দূরবীক্ষণ যন্ত্রে বড় বড় কাল
দাগ দেখে তিনি তাদের সমুদ্র মনে করেছিলেন, পরে অবশ্য এই ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়।
ছায়াপথ, বিষমতারা, নক্ষত্রপুঞ্জ, নীহারিকাঃ
খালি চোখে অদৃশ্য অসংখ্য নক্ষত্রের অস্তিত্ব দূরবীক্ষণ যন্ত্রে ধরা পড়ে। সে সময় খালি চোখে কৃত্তিকা তারামণ্ডলে মাত্র ৬টি নক্ষত্র দেখা যেত; কিন্তু গ্যালিলিও দূরবীক্ষণ যন্ত্রের দ্বারা ৩৬টি নক্ষত্র পর্যবেক্ষণ করেন। সে সময়ের রহস্যময় ছায়াপথ মিল্কিওয়ে পর্যবেক্ষণ করে দেখান যে, তা আসলে অসংখ্য নক্ষত্রের সমষ্টি। দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে তিনি বিষমতারা, নক্ষত্রপুঞ্জ এবং কয়েকটি নীহারিকাও আবিষ্কার করেছিলেন।
বৃহষ্পতি গ্রহের উপগ্রহ আবিষ্কারঃ
দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে গ্যালিলিও প্রথম পর্যায়ের আবিষ্কারগুলোর মধ্যে বৃহস্পতি গ্রহের উপগ্রহ আবিষ্কার বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। তিনি পরপর কয়েক রাত বৃহস্পতি গ্রহ পর্যবেক্ষণ করে বৃহস্পতির চারটি উপগ্রহ খুঁজে পান। বৃহস্পতির উপগ্রহের আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয় যে, ‘গ্রহ-নক্ষত্র প্রভৃতি জ্যোতিষ্করা একমাত্র পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকে’, প্রাচীন জ্যোতির্বিদদের এই মতবাদ সত্য নয়।
শনির বলয়ঃ
১৬১০ খ্রীষ্টাব্দের শেষভাগে পাদুয়া পরিত্যাগের কিছু পূর্বে গ্যালিলিও শনির বলয় আবিষ্কার করেন।
সৌর কলঙ্কঃ
১৬১০ খ্রীষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর বা অক্টোবর মাসে গ্যালিলিও সর্বপ্রথম সূর্যে কতগুলো কালো দাগ পর্যবেক্ষণ করেন। কিন্তু ১৬১২ খ্রীষ্টাব্দের মে মাসের পূর্বে তিনি এ আবিষ্কারের কথা প্রকাশ করেন নি। ইতিমধ্যে ইংল্যাণ্ডের বিজ্ঞানী টমাস হ্যারিয়ট, হল্যাণ্ডের জন ফ্যাব্রিসিয়াস ও জার্মানীতে শাইনার স্বাধীনভাবে সৌরকলঙ্ক পর্যবেক্ষণ করেন, এবং তাদের আবিষ্কারের কথা গ্যালিলিওর আগেই প্রকাশিত হয়। সেই জন্য সৌরকলঙ্ক আবিষ্কারের কৃতিত্ব হ্যারিয়ট, ফ্যাব্রিসিয়াস, শাইনার ও গ্যালিলিও প্রত্যেকেরই আংশিকভাবে প্রাপ্য।
মৃত্যু ও শেষ জীবনঃ
গ্যালিলিও এবং মারিনা গ্যামবা তিন সন্তানের জন্ম দেন, কিন্তু তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হননি। গ্যালিলিও একজন নিবেদিত রোমান ক্যাথলিক ছিলেন বলে যে ধারণা প্রচলিত আছে তা মেনে নিলে তার বিবাহবহির্ভূত এই যৌনাচার অনেকটাই অবাস্তব মনে হয়। তাদের দুই মেয়ে (ভার্জিনিয়া ও লিভিয়া) এবং এক ছেলে (ভিনসেঞ্জিও) জন্মেছিলো। বিবাহবহির্ভূত সন্তান উৎপাদনের জন্য তাদের দুই মেয়েকেই স্বল্প বয়সে আরসেট্রিতে অবস্থিত সান মেটিও নামক চার্চে পাঠিয়ে দেয়া হয়। তাদের দুই মেয়েকে বাকি জীবন সেখানেই পার করতে হয়েছিলো। কনভেন্টে প্রবেশের পর ভার্জিনিয় মারিয়া সেলেস্টি নাম ধারণ করে, সে-ই ছিলো গ্যালিলিওর সন্তানদের মধ্যে সবার বড়। ভার্জিনিয়া সবচেয়ে আদরের সন্তানও ছিলো এবং বাবার মেধার খানিকটা উত্তরাধিকার সে-ই লাভ করতে সমর্থ হয়েছিলো। ১৬৩৪ সালের ২ এপ্রিল তারিখে সে মারা যায়। তার কবর বাসিলিকা ডি সান্তা ক্রস ডি ফিরেঞ্জে গ্যালিলিওর কবরের পাশেই অবস্থিত। লিভিয়া (জ. ১৬০১) সুওর আরকাঞ্জেলা নাম ধারণ করে। বড় বোনের মত সে কিছু করে দেখাতে পারেনি, জীবনের বেশির ভাগ সময়ই সে অসুস্ত ছিলো। ছেলে ভিনসেঞ্জিও (জ. ১৬০৬) পরবর্তীতে বৈধ জাত্যাধিকারী হয় এবং সেসটিলা বচ্চিনারিককে (Sestilia Bocchineri) বিয়ে করে।
গ্যালিলিও মুর্তি
ফ্লোরেন্সের উফিজির বাইরে অবস্থিত মূর্তি
১৬১২ সালে গ্যালিলিও রোমে যেয়ে Accademia dei Lincei-তে যোগ দেন। সেখানে তিনি মূলত সৌর কলঙ্ক পযর্বেক্ষন করতেন। ঐ সালেই কোপারনিকাসের মতবাদের বিরোধী মতবাদ প্রচারিত হয় এবং গ্যালিলিও তা সমর্থন করেন। ১৬১৪ সালে সান্তা মারিয়া নভেলার প্রচারবেদিতে দাড়িয়ে ফাদার টমাসো কাচ্চিনি (Tommaso Caccini, ১৫৭৪ – ১৬৪৮) ব্যাখ্যা সহকারে পৃথিবীর গতি সম্পর্কে গ্যালিলিওর মতবাদ বর্ণনা করেন। এরপর সেই মতবাদের ভিত্তিতে তার বিচার করেন এবং ঘোষণা করেন যে, এগুলো ভয়ঙ্কর এবং ধর্মদ্রোহীতার শামিল। এধরণের অভিযোগ থেকে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের চেষ্টায় তিনি রোমে যান। কিন্তু ১৬১৬ সালে কার্ডিনাল রবার্ট বেলারমাইন ব্যক্তিগতভাবে তার মামলাটি হাতে নেন এবং তাকে হেনস্ত করতে শুরু করেন। ধর্মীয় আইনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিধায় কোপারনিকাসের তত্ত্বকে স্বীকৃতি দেয়া হয় এবং ধর্মীয় আইন হিসেবে কোপারনিকান জ্যোতির্বিজ্ঞান পড়তে বা পড়াতে বাধ্য করা হয়। ১৬২২ সালে গ্যালিলিও তার বিখ্যাত বই দ্য অ্যাসাইয়ার (Saggiatore) রচনা করেন যা ১৬২৩ সালে স্বীকৃতি পাওয়ার পর প্রকাশিত হয়। ১৬২৪ সালে পৃথিবীর প্রথম অণুবীক্ষণ যন্ত্র তৈরি করেন। ১৬৩০ সালে তিনি রোমে ফিরে যান তার রচিত একটি বই প্রকাশের লাইসেন্স নেয়ার জন্য। বইটির নাম ছিল, ডায়ালগ কনসারনিং দ্য টু চিফ ওয়ার্ল্ড সিস্টেম্স। এটি এই লাইসেন্সের আওতায়ই ১৬৩২ সালে ফ্লোরেন্স থেকে প্রকাশিত হয়। ঐ বছরেরই অক্টোবর মাসে তাকে রোমের পবিত্র দপ্তরের (Holy Office) সম্মুখীন হতে হয়। কারণ ছিল “Congregation for the Doctrine of the Faith” (বিশ্বাসের উপদেশাবলীর জন্য সমাবেশ)। আদালত থেকে তাকে একটি দন্ডাদেশ দেওয়া হয় যার মাধ্যমে তাকে পূর্ববর্তী ধ্যান-ধারণা শপথের মাধ্যমে পরিত্যাগের জন্য বলা হয়। এই দন্ডাদেশের কার্যকারিতা প্রমাণের জন্যই তাকে সিয়েনায় একঘরে জীবন কাটাতে হয়। এর কিছু পর ১৬৩৩ সালের ডিসেম্বরে তাকে তার নিজ বাড়ি আরসেট্রিতে ফিরে যাবার অনুমতি দেয়া হয়। ১৬৩৪ সালে তার বড় মেয়ের মৃত্যুর পর গ্যালিলিও অনেকটাই ভেঙে পড়েন। বড় মেয়ে সিস্টার সেলেস্টি (১৬০০ – ১৬৩৪) তাকে সবসময় সঙ্গ দিতো, এই অকালমৃত্যুতে তাই গ্যালিলিও হয়ে পড়েন নিঃসঙ্গ। ১৬৩৮ সালে গ্যালিলিও লিডেন থেকে তার সর্বশেষ বই টু নিউ সায়েন্সেস প্রকাশ করেন। আরসেট্রিতে ১৬৪২ সালের ৮ই জানুয়ারি তারিখে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর সময় তার ছাত্র ভিনসেঞ্জো ভিভিয়ানি তার পাশে ছিলেন।