Posted by : RABBY বুধবার, ১০ জুন, ২০১৫

কম্পিউটার গ্রাফিক্স আমাদের জীবনে যুক্ত করেছে নতুন মাত্রা। মুভিতে স্পেশাল এফেক্ট, 3D গেম এবং বিভিন্ন জটিল মডেলের ভিজুয়ালাইজেশনে এর ব্যাপক প্রয়োগ রয়েছে। এই অসাধারণ গ্রাফিক্সের পেছনে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের গণিত। কম্পিউটার গ্রাফিক্সে কম্পিউটার টেকনোলজি ব্যবহার করে বিভিন্ন বস্তুর জ্যামিতিক রুপায়ণ করা হয়। প্রত্যেক জ্যামিতিক আঁকারের সাথে রয়েছে একটি আবদ্ধ পৃষ্ঠতল। ভিজুয়ালাইজেশন করতে ঐ পৃষ্টতলের জ্যামিতিক বৈশিষ্ট্য দরকার। এরকম একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে পৃষ্ঠতলের অয়লার বৈশিষ্ট্য (euler characteristic of surfaces)। মেশ প্রসেসিং এ এর ব্যাপক প্রয়োগ হয়। গ্রাফিক্স এবং গেম ডেভেলপারদের বিভিন্ন কাজে মেশ প্রসেসিং ব্যবহার করতে হয়।
অয়লার বৈশিষ্ট্য বা অয়লার ফরমূলা গণিতবিদ লিওনার্ট অয়লার (১৭০৭-১৭৮৩) সর্বপ্রথম প্রকাশ করেন অয়লারের আগেও গণিতবিদ রনে দেকার্দ (১৫৯৬-১৬৫০) এবং লাইবনিৎস(১৬৪৬-১৭১৬) এই ফরমূলার কথা জানতেন। অয়লার ফরমূলা খুবই চমকপ্রদ। অয়লার ফরমূলা বুঝতে হলে আগে আমাদের জানতে হবে বহুতলক বা পলিহেড্রা(polyhedra) কি ?। বহুতলক হচ্ছে বহুভুজ দ্বারা গঠিত ত্রিমাত্রিক আকার। আমাদের পরিচিত দুটি বহুতলক হচ্ছে ঘনক এবং পিরামিড।প্রত্যেকটি বহুতলকের থাকে শীর্ষবিন্দু(vertice),পার্শ্বরেখা(edge)এবং পৃষ্ঠ(face)। সাধারণত যে সব বহুতলকের মধ্যস্থ দুটি বিন্দু রেখা দ্বারা যুক্ত করলে রেখা বহুতলকের বাইরে দিয়ে গেলে তাদের অবতল(concave) এবং ভিতর দিয়ে গেলে তাদের বলে উত্তল(convex)।
অয়লার ফরমূলা অনুযায়ী প্রত্যেক উত্তল বহুতলকের শীর্ষবিন্দু সংখ্যা এবং পৃষ্ঠ সংখ্যার যোগফল থেকে পার্শ্বরেখার সংখ্যা বাদ দিলে সবসময় দুই হবে।
শীর্ষবিন্দু সংখ্যা + পৃষ্ঠ সংখ্যা - পার্শ্বরেখার সংখ্যা = ২
শীর্ষবিন্দু সংখ্যা V দিয়ে, পৃষ্ঠ সংখ্যার F দিয়ে এবং পার্শ্বরেখার সংখ্যা E দিয়ে প্রকাশ করলে সমীকরণটি
হবে
V+F-E=2
ঘনকের ক্ষেত্রে শীর্ষবিন্দু সংখ্যা V=৮টি,পৃষ্ঠ সংখ্যা F=৬টি, পার্শ্বরেখার সংখ্যা E=১২টি ৮+৬-১২=২
পিরামিডের ক্ষেত্রে শীর্ষবিন্দু সংখ্যা V=৫টি,পৃষ্ঠ সংখ্যা F=৫টি,পার্শ্বরেখার সংখ্যা E=৮টি ৫+৫-৮=২
শীর্ষবিন্দু, পার্শ্বরেখা এবং পৃষ্ঠের সংখ্যা যতই হোক না কেন শীর্ষবিন্দু এবং পৃষ্ঠের সংখ্যার যোগফল থেকে পার্শ্বরেখা সংখ্যার বিয়োগফল সবসময়ই দুই হবে।
আমরা অয়লার ফরমূলার আরও সাধারণ রূপ দেখবো আরো দেখবো যে এটা পৃষ্ঠতলের বৈশিষ্ট্যের সাথে সম্পর্কিত।
মনে করি আমাদের কাছে রাবারের তৈরি কিছু বহুতলক আছে। এই বহুতলক গুলোকে ভিতরে বাতাস দিয়ে পাম্প করলে বলের মতো গোলাকার হয়ে যাবে। বহুতলকের পার্শ্বরেখা গুলোকে তখন গোলকের উপর জরানো ফিতার মতো লাগবে। ফিতার উপর বিন্দু গুলো হলো শীর্ষবিন্দু। দুই বিন্দুর মাঝখানে রেখাংশ হচ্ছে একেকটি পার্শ্বরেখা আর রেখাংশ দ্বারা আবদ্ধ ক্ষেত্র গুলো পৃষ্ঠ।অতএব বিন্দু সংখ্যা আর আবদ্ধ ক্ষেত্র সংখ্যার যোগফল থেকে রেখাংশ সংখ্যার বিয়োগফল দুই হবে।
একটা ফোলানো রাবারের চতুস্তলক যার চারটি তল 1,2,3,4 ,চারটি বিন্দু এবং ছয়টি পার্শ্বরেখা রয়েছে তাই ৪+৪-৬=২।




এর পার্শ্বরেখা গুলোকে গোলকের গায়ে জড়ানো রবারের ফিতা ভাবা যেতে পারে এবং ফিতা গুলো টেনে একপাশে নিয়ে আসলে 4 নাম্বার পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল বেড়ে গেলএবং 1,2,3 এর আকার কমে গেল। অয়লার ফরমূলা এখনও কার্যকর।



এখন আমরা একটি পার্শ্বরেখা মুছে দিলাম ছয়টা পার্শ্বরেখা থেকে একটা কমে পাঁচট হল কিন্তু পার্শ্বরেখা মুছে দেওয়ায় 1 এবং 4 নাম্বার পৃষ্ঠতল একটি পৃষ্ঠতলে পরিণত হয়েছে তাই পৃষ্ঠও একটা কমে গেছে।
শীর্ষবিন্দু সংখ্যা V=৪,
পৃষ্ঠ সংখ্যা F=৪-১,
পার্শ্বরেখার সংখ্যা E=৬-১
৪+৩-৫=২





আরেকটা রেখা মুছে দিলাম এখন 1,4,3 মিলে একটি পৃষ্ঠ হয়ে গেল
শীর্ষবিন্দু সংখ্যা V=৪,
পৃষ্ঠ সংখ্যা F=৩-১,
পার্শ্বরেখার সংখ্যা E=৫-১
৪+২-৪=২





আবারো আরেকটা রেখা মুছে দিলাম এবার একটা বিন্দুও কমে গেল পৃষ্ঠ দুইটা 1,2
শীর্ষবিন্দু সংখ্যা V=৪-১,
পৃষ্ঠ সংখ্যা F=২,
পার্শ্বরেখার সংখ্যা E=৪-১
৩+২-৩=২





এভাবে সবগুলো পার্শ্বরেখা মুছে দিলাম এখন একটি শীর্ষবিন্দু এবং গোটা গোলকটাই একটি তল
শীর্ষবিন্দু সংখ্যা V=১,
পৃষ্ঠ সংখ্যা F=১,
পার্শ্বরেখার সংখ্যা E=০
১+১-০=২





এখন বিন্দুতে একটা ইচ্ছা মতো একটা রেখা যুক্ত করলাম
শীর্ষবিন্দু সংখ্যা V=১+১,
পৃষ্ঠ সংখ্যা F=১,
পার্শ্বরেখার সংখ্যা E=১
২+১-১=২





রেখার মাঝখানে একটা বিন্দু যোগ করলাম শীর্ষবিন্দু সংখ্যা বেড়ে গেল কিন্তু বিন্দুটি রেখাটাকে দুই ভাগে ভাগ করে তাই পার্শ্বরেখার সংখ্যাও বেড়ে গেল।
শীর্ষবিন্দু সংখ্যা V=২+১,
পৃষ্ঠ সংখ্যা F=১,
পার্শ্বরেখার সংখ্যা E=১+১
৩+১-২=২




এভাবে যতো খুশি ততো বিন্দু যুক্ত করা যায় অয়লার বৈশিষ্ট্য সবসময় দুই হবে।



যদি একটা লুপ আঁকি তাহলে পৃষ্ঠ সংখ্যা হবে দুই লুপের ভিতরে একটা পৃষ্ঠ এবং বাইরে বাকী অংশ আরেকটি পৃষ্ঠ আর লুপটা হবে পার্শ্বরেখা। (V=১)+ (F=২)-(E=১) = ২।




ছিদ্রযুক্ত বহুতলকের ক্ষেত্রে কিন্তু অয়লার ফরমূলা খাটে না। যেমন ঘনকের মাঝখানে যদি একটা গর্ত করা হয় তাহলে যে বহুতলক পাওয়া যায় তার পৃষ্ঠ সংখ্যা ১৬টি, শীর্ষবিন্দু সংখ্যা ১৬টি, পার্শ্বরেখার সংখ্যা ৩২টি অতএব ১৬+১৬-৩২=০ দুই হওয়ার কথা হল শূন্য।
এল হুইল্লিয়ের নামে একজন গণিতবিদ অয়লার বৈশিষ্ট্য কে ছিদ্রযুক্ত তলের ক্ষেত্রে সাধারণীকরণ করেন (এল হুইল্লিয়ের আসলে আংশিক সাধারণীকরণ করেছিল। অয়লার বৈশিষ্ট্যর ব্যাপক আকারে সাধারণীকরণ করেন গণিতবিদ হেনরি পয়েনকেয়ার(১৮৫৪-১৯১২) যার কারণে এটাকে অয়লার-পয়েনকেয়ার বৈশিষ্ট্যও বলা হয়ে থাকে)। ছিদ্রযুক্ত বহুতলকের ক্ষেত্রে অয়লার ফরমূলা হল
V+F-E= 2-2g
এখানে g হল ছিদ্র সংখ্যা বা জেনাস গোলকের মধ্যে কোন ছিদ্র নেই তাই জেনাস g=0 বসালে 2-2×0 = 2। গোলকের মধ্যে গর্ত করলে আমরা পাই টোরাস g=1 বসালে 2-2×1 = 0। রবারের তৈরি ছিদ্র যুক্ত বহুতলককে ভিতরে বাতাস দিয়ে পাম্প করলে তা টোরাসে পরিণত হবে তাই ছিদ্র যুক্ত বহুতলকের ক্ষেত্রে অয়লার ফরমূলা হবে V+F-E=0। দুটি ছিদ্রযুক্ত বহুতলকের ক্ষেত্রে  জেনাস g=2 তাই 2-2×2=2-4 = -2। একটা ঘনকের মধ্যে দুটি ছিদ্র করলে যে বহুতলক পাওয়া যায় তার শীর্ষবিন্দু সংখ্যা V=২৮,পৃষ্ঠ সংখ্যা F=২৮,পার্শ্বরেখার সংখ্যা E=৫৮ অতএব ২৮+২৮-৫৮=-২। এটাকে বলা হয় আবদ্ধ তলের অয়লার বৈশিষ্ট্য গোলকের অয়লার বৈশিষ্ট্য ২,টোরাসের ০,ডাবলটোরাসের -২, ত্রিপল টোরাসের -৪। একে অয়লার নাম্বারও বলা হয়ে থাকে।







অয়লার বিশিষ্টের সাথে সম্পর্কিত আরেকটি মজাদার ব্যাপার আছে সেটা হল মনে করি কেউ চুল বা পশম ওয়ালা গোলক এবং টোরাস নিয়ে চিরুনি দিয়ে আঁচড়ানোর চেস্টা করলো। সে গোলকে আঁচড়াতে গিয়ে দেখবে যে গোলকের সব জায়গায় চুল একভাবে আঁচড়ানো সম্ভব নয় সব সময়ই দুই যায়গায় চুল উচু হয়ে থাকবে। যেভাবেই চেষ্টা করুক সব সময়ই দুই জায়গা অসমান থাকবেই কারন গোলকের অয়লার নাম্বার দুই।
ঠিক একই কারনে পৃথিবীর সব জায়গায় একই দিকে বাতাস প্রবাহিত হতে পারবে না। সব সময়ই বাতাসকে যে কোন দুই জায়গায় ঘুরপাক খেতে হবে কারন পৃথিবী একটা গোলক আর গোলকের অয়লার নাম্বার ২। অপর দিকে টোরাসে খুব সহজেই সব জায়গায় সমান ভাবে আঁচড়ান যাবে

Leave a Reply

Subscribe to Posts | Subscribe to Comments

- Copyright © RABBY - Date A Live - Powered by Blogger - Designed by Johanes Djogan -